বেগুন গাছের রোগগুলো, যেমন - মোজাইক রোগ, পাউডারী মিলডিউ, সাদা মোল্ড রোগ সহ আরো অসংখ্য বেগুন গাছের রোগ ও প্রতিকার নিয়ে আজকের এ আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে। এছাড়াও বেগুনের উপকারিতা গুলো কি কি এবং বেগুন খেলে আপনার কি ধরনের লাভ হতে পারে এবং কি ধরনের ক্ষতি হতে পারে সে সকল বিষয় নিয়েও আজকের আর্টিকেলে কথা বলা হয়েছে। বেগুন দিয়ে বানানো বিভিন্ন রেসিপি নিয়েও আলোচনা করা হবে। বেগুনের উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত জানার জন্য এই পোস্টটি পুরোপুরি শেষ পর্যন্ত দেখুন।
বেগুন ও এর বৈজ্ঞানিক নাম
আমাদের দেশীয় সবজিগুলোর মধ্যে দেখতে সুন্দর-আকর্ষণীয় এবং নামের ক্ষেত্রে বিদঘুটে একটি নাম হচ্ছে বেগুন। সবজি হিসেবে বেগুন বরাবরই ভালো। বাংলায় এটার নাম বেগুন হলেও এটার অনেক ধরনের গুণ রয়েছে। এই বেগুনের বৈজ্ঞানিক নাম হল solunum melongena। এই সবজিটি বাংলাদেশে সব সময় পাওয়া যায়। কারণ বেগুনের গাছ বাংলাদেশে খুব সহজেই চাষ করা যায় এবং বেগুন গাছের মধ্যে খুব ভালো বেগুন ফলিত হয়। বাড়ি অথবা টব যে কোন জায়গায় বেগুন গাছের একটি ছোট্ট চারা রোপণ করলেই দেখা যায় কিছুদিন পর ওই বেগুন গাছে বেগুন ধরা শুরু করে।
বেগুনের রোগসমূহ
বেগুন যদিও বাংলাদেশ এ অনেক ভালো চাষ হয় এর পরেও এই বেগুন গাছে কিছু রোগ দেখা যায়। বেগুন গাছের এই রোগ গুলো হল ভাইরাস জনিত মোজাইক রোগ, বেগুন গাছের পাউডারী মিলডিউ রোগ, White mold রোগ, ফল বিকৃতি সমস্যা, ফল ফেটে যাওয়া সমস্যা, বেগুনের কোনিফেরা ব্লাইট রোগ, ছত্রাক জনিত ঢলে পড়া, ব্যাকটেরিয়াজনিত ঢলে পড়া, শিকরের গিট রোগ, ছোট পাতা রোগ, পাতা ও ফলের দাগ রোগ, গোড়া পচা বা নেতিয়ে পড়া রোগ, ফল ও কাণ্ড পচা রোগ। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে এই বেগুন গাছের রোগ গুলো দেখা যায়। এই বেগুন গাছের রোগ ও প্রতিকার গুলো এবং এদের লক্ষণ ও দমন করার কৌশল নিচে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।
বেগুন গাছের ভাইরাসজনিত মোজাইক রোগ এর লক্ষণ ও প্রতিকার
বেগুন গাছে এই রোগ হয়েছে কিনা বুঝবেন এর পাতার মধ্যে গাড় সবুজ ও হলুদ ছোপ ছোপ কিছুটা মোজাইক টাইলসের মতো ডিজাইন দেখে অথবা কোঁকড়ানো পাতা দেখে। এই রোগের প্রতিকার করতে হলে আপনাকে আক্রান্ত গাছ পুতে ফেলতে হবে এবং আক্রান্ত ডাল কেটে ফেলতে হবে। এই রোগটি মূলত যাব পোকা বহন করে তাই এটাকে দমন করতে এম ইমিডাক্লোরোপ্রিড প্রতি লিটারে এক মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করবেন।
পাউডারী মিলডিঊ রোগ ও এর প্রতিকার
এই রোগটি সনাক্ত করতে আপনাকে দেখতে হবে যে পাতার মধ্যে সাদা পাউডারের মতো দাগ দেখা যায় কিনা। বেশি আক্রান্ত হলে পাতা কালো বা হলুদ হয়ে মারা যায়। এই রোগ থেকে বাঁচতে আপনাকে আক্রান্ত অংশকে ধ্বংস করে দিতে হবে। ক্ষেতকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং পানি নিষ্কাশন কে ভালো রাখতে হবে। লিটারে ২ গ্রাম রিডোমিল গোল্ড অথবা কোমলাস ৪ গ্রাম অথবা গেইভেট বা মনোবিট বা হিউবিট টু এ সকল ওষুধ প্রয়োগ করার মাধ্যমেও এটা থেকে বাঁচা যায়। সাবধানতার জন্য আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না। সুষম সার ব্যবহার করবেন এবং উন্নত জাত চাষ করবেন।
বেগুন গাছের ছত্রাক জনিত রোগ এবং এর প্রতিকার
এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়। পাতা হলুদ ভাব, গাছের এক প্রান্ত ঢলে পড়া এবং একটু পর ধীরে ধীরে অন্য প্রান্তও ঢলে পড়া অর্থাৎ চূড়ান্তভাবে সম্পূর্ণ গাছটি ঢলে পড়া এই রোগের লক্ষণ। এই রোগ হলে গাছে খাদ্য পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যায় শুকিয়ে যায় এবং কিছু ডাল একটু ভালো থাকে। এই রোগের প্রতিকার হল আক্রান্ত গাছকে ফুতে ফেলা বা পুড়ে ফেলা। চাষের পূর্বে জমিতে শতাংশ প্রতি দুই এক কেজি চুন প্রয়োগ করা।
বেগুন গাছের আরো রোগসমূহ এবং তাদের প্রতিকার জানতে এই ওয়েবসাইটটিভিজিট করুন।
বেগুন ও বেগুনের উপকারিতা
- বেগুনের মধ্যে অনেক ধরনের উপকারী ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে এই ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মূলত শরীর থেকে টক্সিন নামক এক ধরনের পদার্থ বের করে দেয়। এভাবেই কোলন ক্যান্সার এক ধরনের ক্যান্সার থেকে বেগুন মুক্তি দেয়।
- বেগুন খেলে স্বাস্থ্য কমতে পারে। কারণ ফাইবার জিনিসটা হজম হতে সাধারণত একটু বেশি সময় লাগে। এজন্য খুদা কম লাগবে এবং স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে।
- বেগুনের থাকা ভিটামিন বি সিক্স হার্টের রোগ প্রতিরোধ করে।
- বেগুনের থাকা বিভিন্ন উপকারী উপাদানের জন্য রক্তচাপ ঠিক থাকে।
- ডায়াবেটিসের জন্য বেগুন হতে পারে একটি আদর্শ সবজি।
- ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে বেগুন।
- যাদের তো অতিরিক্ত শুষ্ক তারা বেগুন খেলে ত্বকের শুষ্কতা কমতেপারে।
বেগুনের বিভিন্ন ধরনের রেসিপি
বেগুনের সবচেয়ে জনপ্রিয় রেসিপি হচ্ছে ‘বেগুনি’। খুব পাতলা করে বেগুনকে কেটে বেসনের মধ্যে ডুবিয়ে ভাষা তেলে ভাজলে এটি ফুলে খুব সুস্বাদু রকমের খাবার ‘বেগুনি’ তৈরি হয়। এছাড়া আলু দিয়ে ভেজে রুটির সাথে বেগুনের তরকারি রেসিপি অনেক ভালো হয়। ইলিশ মাছের সাথে গোল বেগুন একটু মোটা করে কেটে ভাজার পর খেতে খুব ভালো লাগে। এই ভাজাটা পান্তা ভাতের সাথেও খেতে অনেক মজা।
শেষ বক্তব্য
তো বেগুনের বিভিন্ন রোগ এবং এর রোগ গুলোর প্রতিকার কিভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও বেগুনের উপকারিতা, বেগুনের বৈজ্ঞানিক নাম, বেগুন দিয়ে তৈরি করা বিভিন্ন ধরনের রেসিপি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আর্টিকেলটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে। যদি আর্টিকেলটি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে এবং আপনার কাজে এসে থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানান। এবং আমাদের কি কি ইমপ্রুভমেন্ট করা দরকার সে ব্যাপারেও চাইলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আজকের মত এখানেই শেষ। আল্লাহ হাফেজ।