প্রশ্নঃ এইডস কত দিন পর ধরা পরে? উত্তরঃ এইডস ২৩ থেকে ৯০ দিন পরে ধরা পরে। তবে সাধারণত পরীক্ষা না করা হলে এইডস ধরা পরে না বা সনাক্ত করা সম্ভব হয় না।
এইডস কি
এইডস কি - এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে এইডস একটি ভাইরাস সংক্রমিত মরণঘাতী রোগ। এই রোগের এখনো কোন পুরোপুরি চিকিৎসা আবিষ্কার হয় নাই। এইডস রোগের ভাইরাসের নাম এইচ আই ভি। এই ভাইরাসটি মূলত মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। যে কারণে নরমাল কোন রোগের কারণেও মানুষ খুব তাড়াতাড়ি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এবং দুর্বল হওয়ার কারণে সে মারা যেতে পারে। এইচ আই ভি এর I(আই) অক্ষর টা দ্বারা মূলত ইমিউন বুঝানো হয়। ইমিউন মানে হচ্ছে প্রতিরোধে বা প্রতিরক্ষামূলক।
আমাদের শরীরে যখন কোন রোগের জীবাণু প্রবেশ করে তখন আমাদের ইমিউন সিস্টেম সেই জীবাণুকে অটোমেটিক্যালি ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করে। বা এর বিরুদ্ধে ফাইট করে। যার কারণে আমাদের শরীরে একটু গরম অনুভূত হয় তখন আমরা মনে করি যে আমাদের জ্বর হয়েছে। অর্থাৎ জ্বর হচ্ছে আমাদের শরীরে কোন জীবাণুর প্রবেশের একটা ইঙ্গিত।
এইডস কত দিন পর ধরা পরে এবং কিভাবে
সময় হিসাব করতে গেলে এইডস মূলত কয়েক সপ্তাহ পর থেকে ধরা পরে অর্থাৎ এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। এইডস মূলত একটা পরীক্ষা করার মাধ্যমে ধরা পরে। এইচআইভি antigen/antibody test করার মাধ্যমে মূলত এইডস রোগটি ধরা পরে। রোগটি সনাক্ত করতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না। সাধারণত রক্ত পরীক্ষা অথবা লালা পরীক্ষা করার মাধ্যমে রক্তের এন্টিবডি এবং অ্যান্টি জেন চেক করার মাধ্যমে এইডস রোগটি নির্ণয় করা যায়। এছাড়াও এইডসের লোড অনুযায়ী অর্থাৎ কতটুকু ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করেছে সে অনুযায়ী এইডস ৭ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। এবং এরপর গিয়ে এইডস রোগটি ধরা পড়ে এমনও হতে পারে।
ঘরে বসে কিভাবে এইডস পরীক্ষা করা হয়
আগেই বলেছিলাম যে এইডস পরীক্ষাটি অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে অথবা এন্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে সনাক্ত করা হয়। এক ধরনের টেস্টকিট দিয়ে প্রেগনেন্সি পরীক্ষার মত মুখ রক্ত অথবা মুখের লালা দিয়ে এই টেস্টকিটের মাধ্যমে ঘরে বসে এইডস পরীক্ষা করা এখন সম্ভব।
এইডসের লক্ষণ সমূহ
অন্যান্য সকল রোগের মত এইডস রোগ হলেও কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ দেখা যায়। এইচআইভি সংক্রমিত হলে এই ইনফেকশন এর জন্য তিনটা স্টেজ এর মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
লক্ষণ ১ - একিউট ইনফেকশন
এই সময়ে আমাদের সাধারণ ফ্লু হলে যেমন দেখা যায় যেমন জ্বর, গলা ব্যথা অথবা শরীর অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়া, এছাড়া শরীরে ডেঙ্গু জ্বর হলে যেমন রেশ দেখা দেয় ঠিক তেমনি শরীরে রেশ দেখা দেয়। এবং এটা দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত দেখা যায়।
লক্ষণ ২ - সুপ্ত অবস্থা
এই অবস্থাকে মূলত বলা হয় সুপ্ত অবস্থা। দের থেকে দুই সপ্তাহ পর রোগী একেবারে পুরোপুরি সুস্থ মানুষের মতো হয়ে যায়। এবং সাত থেকে দশ বছর পর্যন্তও তার আর কোন লক্ষণ দেখা দেয় না। এই সময়টাতে এইচআইভি ভাইরাসটা মানুষের শরীরে টি-সেল যে কোষ সমষ্টি রয়েছে ওই কোষ সমষ্টিকে সরাসরি আক্রমণ করে। যার ফলে মানুষের ইমিউন সিস্টেম অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা একেবারেই ধ্বংস হয়ে যায়।
লক্ষণ ৩ - কমপ্লেক্স অবস্থা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে রোগীর মধ্যে একেবারে শেষ পর্যায়ের কিছু বড় বড় লক্ষণ দেখা যায় এই অবস্থায়। লক্ষণ গুলোর মধ্যে প্রথমত দেড় থেকে দুই মাস ধরে জ্বর দেখা দেয়, ক্ষুধা মন্দা দেখা দেয় ফলে কিছু খেতে ইচ্ছে করে না, অস্বাভাবিক হারে রোগীর ওজন কমে যায়, অসম্ভব রকমের ক্লান্ত অনুভব হয়, কয়েক মাস ধরে ডায়রিয়া লেগে থাকে। এছাড়াও ক্রমাগত কাশি, গারো বগলে ব্যথা, শ্বসনতন্ত্রে সংক্রমণ এবং ছত্রাক জনিত সংক্রমণ দেখা দেয়।
এই লক্ষণ গুলোর পরের অবস্থাই হচ্ছে এইডস। অর্থাৎ ইমিউন সিস্টেম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এর ফলে ঘন ঘন ভাবে রোগীর সবগুলো লক্ষণ একই সাথে দেখা দেয়। এবং এই রোগগুলো প্রতিরোধ করতে না পারার কারণে এইডস আক্রান্ত রোগী খুব তাড়াতাড়ি মারা যায়।
এইডস এর কারণ সমূহ
কিছু নির্দিষ্ট কারণেই মূলত এইডস হতে পারে। এইডসের এই কারণগুলো নিচে দেওয়া হলঃ
এইডস আক্রান্ত পুরুষ অথবা মহিলার সঙ্গে সরাসরি যৌন মিলন করার কারণে এইডস হয়
এইডস আক্রান্ত পুরুষ অথবা মহিলা অথবা যেকোনো ব্যক্তির শরীর থেকে নিজের শরীরে রক্ত নেওয়ার কারণে এইডস হয়
এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমিত রোগীর শরীরে ব্যবহৃত ইনজেকশন সিরিঞ্জ যদি অন্য কারো শরীরে ব্যবহার করা হয় তাহলে তার এইডস হয়
ভাইরাস সংক্রমিত রোগীর শরীরে ব্যবহৃত অপারেশন যন্ত্রপাতি অন্য কারো শরীরে ব্যবহার করলে এইডস হয়
সমকামিতার মাধ্যমে ও এইডস হয়
এইডস আক্রান্ত মায়ের গর্ভে সন্তান জন্ম নিলে ওই সন্তানেরও এইডস হয়
আক্রান্ত মায়ের দুধ পান করলে এইডস হয়
আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের ব্যবহৃত নাক কান পড়ার সুজ অন্য কারো শরীরে ব্যবহার করলেও তার এইডস হতে পারে
এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির অঙ্গ অন্য কারও দেহে প্রতিস্থাপন করলে তারও এইডস হতে পারে
এইডস এর প্রতিকার
এইডসের একক কোন অ্যান্টিবায়োটিক এখনো আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে আলাদা আলাদা অনেকগুলো ক্ষুদ্র চিকিৎসার সমন্বয়ে এইডস আক্রান্ত রোগীর দেহে কিছুটা উন্নতি দেখা গিয়েছে। তবে এর কোন নিশ্চয়তা নেই যে এ সকল চিকিৎসার মাধ্যমে এইডস রোগ ভালো হবে। তাই যে সকল কারণে এইডস হয় সেগুলো থেকে বেঁচে থাকায় এইডস রোগ থেকে প্রতিকারের একমাত্র উপায়।
এইডস রোগীর খাবার
অনেকের হয়তো জানার ইচ্ছা যে এইডস রোগ হলে কি কি খাওয়া যায় এবং কি কি খাওয়া যায় না? মূলত এইডস রোগ হলে শেষের দিকে রোগীর ক্ষুধা মন্দার দেখা দেয় এই কারণে রোগী খাবার খেতে পারে না তবে ডাক্তারদের মতে এইডস হলে এমন কোন খাবার নেই যেটা রোগী খেলে তার ক্ষতি হতে পারে।
এইডস রোগ নিয়ে শেষ কথা
আপনি যদি এই পর্যন্ত এসে থাকেন তাহলে এটা আমি মোটামুটি সিউর যে এইডস নিয়ে আপনার যত ধরনের প্রশ্ন ছিল সবগুলোর উত্তর আপনি পেয়ে গেছেন। এইডস কি? এইডস কেন হয়? এই রোগ হলে কি হয় এবং কিভাবে হতে পারে? এইডস কত দিন পর ধরা পরে? এইডস রোগের লক্ষণ ও কারণগুলি কি কি? ঘরে বসে কিভাবে এইডস পরীক্ষা করা যায়? এইডস এর প্রতিকারগুলো, এর থেকে বাঁচার উপায় গুলো, এই রোগ কি কারো সংস্পর্শে এলে হয় কিনা! এই ধরনের আপনার যতগুলো প্রশ্ন ছিল আশা করি সবগুলোর উত্তর আপনি পেয়ে গেছেন।